আবু বক্কর সিদ্দিক, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অপহৃত ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী সাড়ে ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার, জড়িতদের গ্রেপ্তার, ব্যবস্থা গ্রহণসহ যথাযথ আইনে প্রতিবেদন দাখিল করতে তদন্তকারী কর্মকর্তার (আইও'র) 'না'।
জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় উপজেলার শোভাগঞ্জ কলেজ মোড় থেকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের শিকার ঐ স্কুলছাত্রী।
অপহৃতার প্রতিবেশী ২ পরিবারের পরিকল্পনানুযায়ী রনজিনা আক্তার তার ছোট ভাই কামরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে ফাঁকিতে উক্ত কলেজ মোড়ে ডেকে আনে স্কুলছাত্রীকে। সেখানে আগে থেকেই অটোবাইক (মিশুক) গাড়ি নিয়ে ওঁৎপেতে থাকা অপহরণকারী চক্রের ৮ সদস্য জোড়পূর্বক স্কুলছাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তী ১৯ ফেব্রুয়ারী অপহৃতার পিতা সংশ্লিষ্ট আইনে থানায় মামলা করেন। মামলার আইও (তদন্তকারী কর্মকর্তা) এসআই রুহুল আমীন রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও ১৩ বছর বয়সী স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করেনি। বার বার অপহরণসহ পরিকল্পনায় জড়িত, এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামীরা অপহৃতাকে আটকে রাখার অবস্থান মামলার আইওকে জানালেই অপহৃতাকে নিয়ে নিরাপদে চলে যায়। রহস্যজনক কারণে আইও দৈত্বভূমিকা পালন করায় চক্রটি সংবাদ পেয়ে থাকে। অসংখ্যবার বলার পর রনজিনা আক্তারকে (১৮ বছর ৬ মাসকে) গ্রেপ্তারের পর 'আসামী একজন শিশু' বলে উল্লেখ করে আদালতে সোপর্দ্দ করলে ঐ দিনই বিজ্ঞ আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। এরআগে রনজিনার মোবাইলফোনের কল তালিকা, ইমো, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসএ্যাপ চ্যাটিংয়ের তথ্য উদ্ধার বা তাকে কোনরূপ জিজ্ঞাসাবাদ করেনি আইও।মামলার পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই আবু সাঈদ প্রযুক্তিগত কৌশলে রনজিনা আক্তার, অপহরণকারী চক্র ও পরিকল্পনাকারীদের দীর্ঘ দিনের ব্যাপক ফোনকলের তালিকা উদ্ধার করেন। যেখানে রনজিনাসহ তার সঙ্গী শিরিনা ও তাদের পরিবারের যোগাযোগের ব্যাপক তথ্যের প্রমাণ পাওয়া গেলেও সেখানে এ অপহৃত স্কুলছাত্রী ও তার পরিবারের কোন যোগসূত্র মেলেনি।
অপহৃতার নামীয় মূল্যবান সম্পত্তির প্রতি লোলুভদৃষ্টিতে রনজিনাকে ও তার পিতা রঞ্জু মিয়াসহ পরিবারকে ব্যবহার করেছে শিরিনার পিতা আঃ খালেক (সাইদুর)। অপহরণকারীরা রঞ্জু মিয়া, সাইদুরের ভাবী শিরিনার পালিত মায়ের নিকটআত্নীয় হওয়ায় দীর্ঘ পরিকল্পনানুযায়ী এ ঘটনার পর থেকে অপহৃতাকে বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে তাদের পক্ষে থাকতে ও নামীয় সম্পত্তি বিক্রি করে নেয়ার জন্য শারিরীক ও মানসিকভাবে অপহৃতাকে নির্যাতন করছে। তাকে জিম্মি করে বিভিন্ন প্রকারের কাগজে সহি-স্বাক্ষর, বক্তব্য লিখে পাঠ করিয়ে তা গ্রহণ, নানা ধরণের অসহনীয় কর্মকাণ্ডে বাধ্য করে স্থির ও ভিডিওচিত্র ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
অপহৃতা তার বাবা-মাসহ পরিবারে ফিরতে চাওয়ায়, তাকে বাধ্য করতে না পারায় নির্যাতন করা ছাড়াও ঘুম ও সংজ্ঞা হারানো ঔষধ সেবন করানো, ইনজেকশন পুশ করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জিম্মি করে রেখেছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়।
বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও অপহরণে জড়িত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, যতদিন পর্যন্ত ভিক্টিম তার বাবা-মাসহ পরিবার ও মামলার বিপক্ষে গিয়ে অপহরণে জড়িতদের পক্ষে কথা না বলবে, বাদী মামলা তুলে না নিবে। মামলার আইও এসআই রুহুল আমীন ততদিন পর্যন্ত ভিক্টিমকে উদ্ধার বা কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না। এছাড়া, পরিকল্পিত এ অপহরণকে তিনি প্রেমঘটিত কারণ দেঘিয়ে প্রকৃত ঘটনার বিপক্ষে তথা আসামীসহ জড়িতদের যোগসাজশে পক্ষপাতিত্বমূলক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এজন্য, বিভিন্ন সময় ও স্থানে লেনদেন হয়েছে সাড়ে ৮ লাখ টাকা। আর এ টাকার জন্য ভিক্টিমের নামীয় সম্পত্তি বিক্রি করে নিতে আসামীরা ভিক্টিমকে জিম্মি করেছে। বর্তমানে আসামী রনজিনার বাবা রঞ্জু মিয়া অন্যান্য আসামীসহ জড়িতদের ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমীনের যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। আর এ সুবাদে রঞ্জু মিয়া ও সাইদুরসহ দলবল নিয়ে অপহৃতার পরিবারসহ স্বাক্ষী ও তাদের পরিবারের প্রতি প্রকাশ্যেই নানা ধরণের কঠোর হুমকী-ধামকী প্রদান, অপহরণ মামলা তুলে নিতে চাপসৃষ্টি, বাদীকে মারতে বসতবাড়ির নিকটসহ রাস্তা-ঘাটে অবস্থান নেয়। এছাড়া, হয়রাণী করতে বাদী ও স্বাক্ষীদেরসহ তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে রঞ্জু মিয়া থানায় উল্টো অভিযোগ করে। এ অভিযোগ তদন্তে এসে এএসআই মুকুল মিয়া অভিযোগ উল্টো বলে জানতে পান। পরে রঞ্জু মিয়া বাদী হয়ে অপহরণ মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদেরসহ তাদের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মিথ্যা মামলা করে।
আসামী আব্দুল ওরফে আঃ রহিম, আঃ খালেক ওরফে সাইদুর, কাজী আঃ মান্নান, আঃ রাজ্জাক, রঞ্জু মিয়া, সোলায়মান, সঞ্জু মিয়াসহ অন্যান্যরা। সূত্রগুলো আরো জানায়, আত্মীয়তার সূত্র ধরে আসামী আব্দুল, রঞ্জু ও সাইদুর দীর্ঘ পরিকল্পনা মোতাবেক এ অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে।
পরিবার-পরিজন, স্বাক্ষী ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বাদী বলেন- জমিজমা সম্পর্কিত বিরোধীয় পক্ষ দীর্ঘ পরিকল্পনানুযায়ী ৯ম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেধাবী ছাত্রী তার মেয়েকে অপহরণ করেছে। এখন, বড় মেয়ে বিবিএ (সম্মান) শেষবর্ষের পরীক্ষার্থী রংপুরে থাকায় তাকেও অপহরণের হুমকী দিচ্ছে। হামলা-মামলাসহ প্রতিনিয়তই হত্যার হুমকী অব্যহত রেখেছে। মামলার আইও'র রহস্যজনক দৈত্বভূমিকা বুঝতে পেয়ে বার বার পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। এসআই রুহুল আমীনকেও জিজ্ঞাসাবাদের দাবী জানিয়ে তাকে এ মামলা থেকে বিরত রেখে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছি। ভিক্টিম উদ্ধারপূর্বক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, তার নামীয় জমি-জমার নিশ্চয়তা, উজ্জল ভবিষ্যৎকে এভাবে ধ্বংসের পায়তারা করার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন, অপরাধীদের যথাযথ শান্তির দাবীও করছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, সামাজিক মাধ্যমসহ জড়িতদের বলাবলি থেকে লোক মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি, জমি-জমা সম্পর্কিত আমার পরিবারের বিরোধীয় আব্দুল খালেক ওরফে সাইদুর সুবিধা লাভে তার মেয়ে শিরিনা ও রনজিনা ও তাদের ২ পরিবার এ ঘটনায় জড়িত। অপহরণের ২ দিন আগে (১৪ ফেব্রুয়ারী দিন গত রাতে) ঢাকায় সাইদুরের মেয়েকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর অপহৃতার নামীয় সম্পত্তির একটি সাবেক তফসীল নিয়ে মামলায় একাধিকবার বিজ্ঞ আদালতে হেরে যাওয়ায় এ পরিবারের বিরুদ্ধে সাইদুর ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে নানান পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছে। সাইদুর আমার পরিবারে ইতঃপূর্বে কয়েকবার হামলা-মামলা ও ব্যাপক লুটপাট করেছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাকে হত্যাসহ পরিবারের ক্ষয়ক্ষতি করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
এদিকে, উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম (রাজা), কাজী আঃ মান্নান, তার ছেলেসহ চক্রটি অপহরণের পর বড়ুয়াবাজারস্থ কাজী অফিসে সালিশের মাধ্যমে স্কুলছাত্রীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার নামে কথিত সালিশনামায় স্বাক্ষর গ্রহণের পর প্রতারণা করেছেন বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমীন বলেন, ভিক্টিম উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।
জেলা পুলিশ সুপার নিশাত এঞ্জেলা বলেন, বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটির ব্যবস্থা গ্রহণে অন্যস্তরে হস্তান্তরের জন্য রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দপ্তরে সংশ্লিষ্ট বার্তা পাঠানো হয়েছে।