আহম্মেদ ইমতিয়াজ, নিজস্ব প্রতিনিধি: আমার বয়স ৮০ এর বেশী হয়ে গেছে। আমি নিজে নির্বাচন করব, এটা তো চিন্তাই করি না।
নতুন প্রজন্ম যারা আছে, আর যাদের বয়স ৬০ বছর হয়ে গেছে, তারা তো মেচিউরড (পরিপক্ষ) হয়ে গেছে, এদের এগিয়ে এসে নেতৃত্ব নেয়া উচিত, দেয়া উচিত। এসব কথা বলেন সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, আমি সক্রিয়ভাবে সাহায্য করতে চাই, যারা গণতন্ত্রকে পুনর্জীবিত করার জন্য আইনি সংস্কারের কথা বলবেন, নতুন আইন করার কথা বলবেন, এসব ব্যাপারে। আমি চাইছি যে, দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ নেয়, এ ব্যাপারে কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখতে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমি মনে করি এটা করা দরকার।
তিনি বলেন, আমি একজন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই চাইব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদের যা কিছুই হোক, নির্বাচন হোক, নির্বাচিত সংসদ হোক, সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠরা সংবিধান অনুযায়ী সরকার গঠন করুক, এগুলো তো সংবিধানে রয়েছে। তবে আশঙ্কার কারণ হল, ৫ বছর এ বিধানগুলো থাকা সত্ত্বেও আসলে কি হল? আরও আশঙ্কার কারণ হল, জনগণ হিসেবে আমরা নিরবতার কেন শিকার হলাম?
ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধানের কিছু প্রয়োজন আছে সংস্কারের। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখার ব্যাপারে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। সংস্কার আলোচনা আমার মনে হয় হওয়া উচিত। কার্যকরভাবে মতবিনিময়, আলোচনা করা দরকার।
তিনি বলেন, জাতীয় সংলাপ খুব আনুষ্ঠানিক, আমি তো মনে করি আলোচনার মধ্যে, কথাগুলো আসা দরকার। ভাগ্যিস যে আমাদের এসব ব্যাপারে মৌলিক কোনো বিতর্ক নেই। এটা আমাদের প্লাস পয়েন্ট যে, গণতন্ত্রের পক্ষে সবার ঐক্যমত আছে এবং এ ঐক্যমত গড়ে উঠেছে অভিজ্ঞতার আলোকে। যখন গণতন্ত্র থাকে না তখন যেসব ক্ষতি হয় সেসব তো আমরা হাড়ে-হাড়ে উপলব্ধি করেছি, করছি।
ইদানিং ছাত্রদের যে আন্দোলন হল, দেখা যাচ্ছে যে, তাদের যে বক্তব্য, তারা যেভাবে আন্দোলন করেছে, সফলভাবে করেছে। যে দাবিগুলো করেছে তা খুবই যুক্তিসঙ্গত। এদেরকে কেন্দ্র করে সত্যিই একটা আশার আলো দেখা দরকার।
ঐক্য প্রক্রিয়া কাজ করবে কি না, সে বিষয়ে অনেকের সংসয় আছে, আপনার কি ধারণা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগণের ওপর আস্থা রেখেই এ উদ্যোগটা নিয়েছি। আমরা দেখেছি, দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে বড়-বড় সংকটকে আমরা মোকাবেলা করেছি সফলভাবে। ভাষা আন্দোলনের সময় জিন্নাহ সাহেবের মত লোক যেভাবে অবস্থান নিয়েছিল, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে সে কথা প্রত্যাখ্যান করতে হয়েছিল। ছয় দফা, এগার দফা আন্দোলন-তখন বলা হয়েছিল, অস্ত্রে ভাসিয়ে দেয়া হবে। সে অস্ত্র থাকল না। এরপর আমরা স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হয়েছিলাম। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফসল হিসেবে স্বাধীনতা পেলাম।
তিনি আরও বলেন, বাঙালী কখনও অন্যায় মেনে নেয় না, অন্যায়ের কাছে আত্মসমপর্ণ করে না। তারা একত্র হয়ে এটা মোকাবেলা করে। ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখি, ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করলে সফল হয়েছে, প্রত্যেকবারই সফল হয়েছে। তো, সে জিনিসটা থেকেই আমি আশাবাদী যে, বাংলাদেশে যতকিছুই হোক, কিন্তু জনগণ মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এটা মোকাবেলা করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করবে এবং সফলভাবে এটাকে মোকাবেলা করতে পারবে।