হারিয়ে যেতে বসেছে মাদারীপুরের খেজুর রস ও গুড় (ভিডিও)
শনিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২১
মাতুব্বর শফিক স্বপন: খেজুর রস’ খেজুর গুড়’ দক্ষিনের দ্বার মাদারীপুর’। খেজুরের রস ও গুড়ের আদিকাল থেকেই মাদারীপুরের এর ঐতিহ্য রয়েছে।
গত ৫বছরের তথ্য মতে হারিয়ে যেতে বসেছে মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ রস ও গুড়। বানিজ্যিকভাবে অন্য অঞ্চলে রপ্তানী না হলেও রাজধানীসহ দেশ- বিদেশে স্বজনদের নিকট পাঠানো হয় এ গুড়। তবে আগের মত গাছ ও রস না থাকায় চড়া দামেই বিক্রি হয় রস ও গুড়। খাটি গুড় পেতে দামের দিকে নজর দেয় না ক্রেতারা। আর কিছ অসাধু ব্যবসায়ীরাও এই সুযোগে বেশী লাভের আসায় চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছে। তবে মাদারীপুুরের এই খেজুরের গুড়ের ঐতিহ্য যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্যই জেলা প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছে।
সকাল হওয়ার আগেই তাপালে রস ঠেলে আগুনের আঁচে ধীরে ধীরে সোনালি, কমলা অবশেষ রক্তিম তার রং। তখন তার কয়েকটি নামে গুড় তৈরি করা হয়। যেমন ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, খানডা গুড়, নলের গুড়। খুব সকালে গাছ থেকে রস নামিয়ে সেই রস জ্বালিয়ে তৈরী করা হয় সুস্বাদু গুড়। বাজারে দেখা যায় গুড়ের ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়। তবে খাটি গুড় পাবে কিনা তা নিয়ে সংকিত থাকে বেশীরভাগ ক্রেতারা। শীত কাল এলেই মাদারীপুরের খেজুর রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়। স্বজনদের নিকট গুড় পাঠানো, মেয়ে জামাই- আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে নিমন্ত্রন করে বিভিন্ন পিঠা-পায়েস তৈরী করে খাওয়ানোর ধুম পড়ে এ অঞ্চলে। বছরের বাকি সময় এখানে আপনজনেরা বেড়াতে না আসলেও শীতের মৌসুমে খেজুর রস ও গুড়ের স্বাদ গ্রহন করতে ছুটে আসে এখানে। তবে আগের মত খেজুর গাছ না থাকায় অনেকেই খেজুর গাছের চাষ ও রস সংগ্রহ বাদ দিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া এই গাছ বিলপ্তীর কারন হিসাবে বলা হয় বিভিন্ন ইট ভাটা জ¦ালানী হিসাবের এর ব্যবহার এবং মেহগনী ও রেন্ডী গাছের জন্য গাছে রস না হয়ে অল্পদিনেই মরে যায়।
২০১৫-১৬ অর্থ বছরে খেজুর গাছের জমির পরিমান ছিল ৫০ হেক্টর, গাছের সংখ্যা ছিল ৬৪৮০০, গাছি/শেয়ালীর সংখ্যা ৫১৫ জন, খেজুর গুড় উৎপাদন ছিল ২৪০ মে.টন,সম্ভাব্য গুড়ের চাহিদা ছিল ৬২৩ মে.টন।
গত ৫বছরে জমির পরিমান, গাছের পরিমান, গাছি/ শেয়ালীর সংখ্যা, খেজুর গুড় উৎপাদন ও সম্ভাব্য গুড়ের চাহিদা সবই কমে অর্ধেক হয়ে গেছে-
২০১৯-২০ অর্থ বছরে জমির পরিমান ছিল ৩৪ হেক্টর, গাছের সংখ্যা ৪০৭০০, গাছের সংখ্যা ছিল ১২,২১০, গাছি/শেয়ালীর সংখ্যা ৩০৬ জন, খেজুর গুড় উৎপাদন ছিল ১৮৩ মে.টন,সম্ভাব্য গুড়ের চাহিদা ছিল ৬৩০ মে.টন।
আগের মত এখন আর গাছ নাই, মেহগনী ও রেন্ডী গাছের জন্য খেজুর গাছ মরে যায় এবং রস তেমন পড়ে না। তাছাড়া আমাদের মাদারীপুরের গুড় অন্য এলাকা ও জেলার চেয়ে অনেক ভাল। তবে একটু দামে বেশী হয় ভাল গুড় নিতে হলে।
খেজুর গুড়ের মান ভাল করার জন্য আমরা গুড় প্রস্তুতকারীদের সাথে আলোচনা করেছি। আর খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য হরটিকালচার সেন্টারকে ১০ হাজার চারা গাছের অর্ডার দিয়েছি। আমরা মাদারীপুরের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য রক্ষায় সচেষ্ট আছি।