আসলাম আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি:গাড়ি পার্কিং রাজধানী ঢাকার এখন বড় সমস্যা । কোথাও কোথাও রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশ চলে যাচ্ছে থেমে থাকা যানবাহনের দখলে।
এতে সৃষ্ট যানজট হয়ে উঠছে আরও অসহনীয়।
সম্প্রতি মিরপুর-২ নম্বর, চিড়িয়াখানা, মিরপুর- ১০, ১১, ১২ ও মিরপুর-১৪ নম্বরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, ছয় লেনের রাস্তার তিন থেকে চার লেনই পার্কিং করা গাড়ির দখলে। মিরপুর-১২ নম্বর এলাকায় সড়কের দুপাশে পার্কিং করে রাখা হয়েছে রবরব, শিকড়, প্রজাপতি ও স্বাধীনসহ রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস। মিরপুরের দুয়ারীপাড়ায় প্রধান সড়কের অর্ধেক জায়গা দখল করে রেখেছে আশীর্বাদ আর বিহঙ্গ পরিবহনের বাস। একই অবস্থা চিড়িয়াখানার প্রধান সড়কেও। সেখানে তানজিল, বিহঙ্গ, খাজাবাবা ও নূর-এ মক্কা পরিবহনের বাসগুলো পার্ক করা আছে সড়ক দখল করে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই গাড়িগুলো পার্ক করে রাখছেন চালকরা। বিশেষ করে বাজার এলাকায় সবসময় জানজট লেগেই থাকে। আর চালকরা বলছেন, মালিকদের পক্ষ থেকে গাড়ি রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ট্রিপ শেষে তারা রাস্তার পাশে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বাসগুলো।
একই অবস্থা মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকাতেও। রাজধানীসহ দেশের দূরপাল্লার বাসগুলো সড়েকের দুপাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হচ্ছে। আর সেগুনবাগিচা ও অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত মতিঝিলের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ!
বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে থেকে শুরু করে রেল ভবনের শেষপ্রান্ত ও প্রেস ক্লাব পর্যন্ত সড়কের ওপর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার্কিং করে রাখা হয়। নটরডেম কলেজের সামনের সড়কে প্রাইভেটকার, বাস-ট্রাক ও লরিসহ নানা ধরনের যানবাহন পার্কিং করে রাখা হয়। এ ছাড়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে শুরু করে কারওয়ান বাজার হয়ে মোতালিব প্লাজা-এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল ও কাঁটাবন হয়ে নীলক্ষেত পর্যন্ত রাস্তার ওপর নানা ধরনের যানবাহন পার্ক করে রাখা হয়। একই অবস্থা ফার্মগেট থেকে সিটি কলেজ মোড় পর্যন্ত। মামলা দিয়েও ওই এলাকার সড়কে পার্কিং ঠেকানো বন্ধ করা যাচ্ছে না।
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৪৭ ধারায় বলা আছে, সরকার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ, ট্রাফিক পুলিশের পরামর্শে মোটরযান পার্কিং এলাকা নির্ধারণ করতে পারবে। নির্ধারিত এলাকা ছাড়া পার্কিং করা যাবে না, যদি কেউ করে তা হবে অপরাধ। এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। একই সঙ্গে চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কর্তন করা হবে। যদিও এখন পয়েন্ট কাটার নিয়ম কার্যকর নেই।
পুলিশের ভাষ্য মতে, আইন অনুযায়ী তারা জরিমানা করতে পারে না। শুধু রেকার দিয়ে থানায় নিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী পুলিশ শুধু গাড়িগুলোকে রেকার লাগিয়ে সরিয়ে নিতে পারে। মামলা বা জরিমানা করতে পারে না। ৪৭ ধারায় জরিমানা করতে পারে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ঢাকার ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কোথাও ময়লার ভাগাড় হয়েছে। কোথাও বা নেশাখোরদের আস্তানা। দেয়ালঘেরা অপ্রয়োজনীয় মিডিয়ান ভেঙে সেখানে পরিকল্পিত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে নগরীতে গাড়ি পার্কিংয়ের অনেকটাই সমাধান হবে।
আর পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের মতে, শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে পার্কিং ব্যবস্থা ছাড়া গড়ে উঠা ৯০ ভাগ ভবন সংস্কার করতে হবে। যেটি বর্তমান সময়ে অনেকটাই অসম্ভব। তাই সরকারকে প্যাটারনস্টার পার্কিংয়ের দিকে ঝুঁকতে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। তার মতে, এটা অনেকটা নাগরদোলার মতো। ঢাকায় যেহেতু জায়গা কম, তাই এ পদ্ধতি শহরের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান জানান, সাধারণ সময়ে দুটি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য যে জায়গা লাগে, প্যাটারনস্টার পদ্ধতিতে একসঙ্গে সেই জায়গাতেই ১৮ থেকে ২০টি গাড়ি পার্ক করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, এ পদ্ধতিতে খরচ কম। তিন থেকে পাঁচ দিনে তৈরি করা সম্ভব। এখানে চালককে পার্কিং লটে থাকতে হয় না বা তাকে ঘুরে ঘুরে পার্কিংয়ের জায়গাও খুঁজতে হয় না। আর এটা যেহেতু স্টিল দিয়ে তৈরি, ফলে গুরুত্ব বুঝে একস্থান থেকে অন্যস্থানে চাইলেই এটি দ্রুত সময়ে সরিয়ে নেয়া যায়।