রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
তোফায়েল আহম্মেদ, নিজস্ব প্রতিনিধি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থনকেই সরকারের সার্বিক কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, আমরা সব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)
ইইউর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল বাণিজ্য, সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়ে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও সংস্কারের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ইইউ বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য আমদানি করে।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকা ও নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত ২৭টি ইউরোপীয় দেশের প্রতিনিধিত্বকারী কূটনীতিকরা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
যুক্তরাজ্য
ইন্দো-প্যাসিফিকবিষয়ক ব্রিটিশ মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্টের ঢাকা সফরকালে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ সমর্থনে যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তিনি সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং যুক্তরাজ্য কীভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন।’
চীন
‘পূর্ববর্তী সব সরকার চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং আমরা এটি অব্যাহত রাখাব’ উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সরকারের সম্পৃক্ততা বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন।
ভারত
তৌহিদ হোসেন বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন ‘আমরা ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি এবং আমি বিশ্বাস করি, এটি ভারতের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
আগামী মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এফওসি হবে সেক্ষেত্রে দিকে প্রথম পদক্ষেপ।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ড. ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে টেলিফোন কথোপকথন এবং ইউএনজিএ’র ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তার বৈঠকসহ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্তমান রাজনৈতিক আবহাওয়ায় চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করে বলেন, ‘কিছু সমস্যা থাকতে পারে, এটি স্বাভাবিক। যখন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়, তখন সমস্যা হতেই পারে। উভয় পক্ষের সুবিধার জন্য এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে একটি ভালো কর্ম সম্পর্ক তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য।’ তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগের পর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করার কারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্বীকার করেন তৌহিদ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির পুনর্মূল্যায়নের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে, ফলে জোট পুনর্গঠন এবং আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদার করার নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।