লিটন মোল্লা, নিজস্ব প্রতিনিধি : জামায়াত ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেবে বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জামায়াতে ইসলামী সুনামগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এই কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সূচনা বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের মনে অনেক কষ্ট, দুঃখ ও ব্যথা আছে। কিন্তু আমরা ক্লিয়ার করেছি, আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। আমাদের অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সব শেষে দিশেহারা হয়ে আমাদের দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘যারা খুন ও গুমের সঙ্গে জড়িত, অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের বিচার করতে হবে। এটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নয়, এটা এ জন্য যারা খুন করে খুনি, তাদের পরিণতি দেখে যেন অন্যরা শিক্ষা নেয়। মানবসমাজকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্যই এই বিচার করতেই হবে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘জামায়াত যদি ক্ষমতায় যায় শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে। অনেক দেশে পড়াশোনা শেষেই চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যায়। আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেব। নৈতিক শিক্ষা গুরুত্ব পাবে। শিক্ষা শেষে সনদের সঙ্গে সঙ্গে যেন যোগ্যতা অনুযায়ী মর্যাদাপূর্ণ কাজ পাওয়া যায়, সেটার ব্যবস্থা করব।’
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে জামায়াত আমির বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর অনেকেই ক্ষমতার দাপিয়ে বেরিয়েছেন। আমাদের ভিসা, টিকিট ছাড়া দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলা হতো। যারা এসব বলতেন তারাই ভিসা ও টিকিট ছাড়া দেশ ছেড়েছেন। আমরা বলি, ফিরে এসে দেখেন দেশের কী করে গেছেন, বারোটা বাজিয়ে গেছেন।’
‘আমাদের সন্তানেরা রাস্তায় নেমে ন্যায়বিচার চেয়েছে, তারা বৈষম্যহীন সমাজ চেয়েছেন। এত রক্ত দিয়ে যারা আমাদের মুক্ত পরিবেশ দিয়েছে, তাদের স্বপ্নপূরণ করতে হবে। তারা পচা সমাজ চায় না। তারা শ্রেষ্ঠ সমাজ চায়। তাই পরস্পরকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে বৈষম্যহীন, মানবিক দেশ গড়তে হবে। জামায়াতে ইসলামী সেই দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগুচ্ছে।’
জামায়াত ধর্ম, বর্ণের ভিত্তিতে বিভাজনে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘মেজরিটি, মাইনরিটি বলে কোনো বিষয় নেই। সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। আমরা সবার সম্মান ও মর্যাদায় বিশ্বাসী।’
জামায়াতের আমির তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমরা চাই না, দেশে একটা পরিবর্তন হলে বিভিন্ন উপাসনালয়ে পাহারা বসাতে হবে। এমন একটি সামাজিক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে চাই, যেখানে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, মঠ কিছুই পাহারা দিতে হবে না। তবে কিছু দুষ্টু লোকতো আছেই, যারা অপকর্ম করে। ৫ আগস্টের পর আমরা এক নাগাড়ে ১৫ দিন পাহারার ব্যবস্থা করেছি।’
জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি মো. মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, হবিগঞ্জ জেলা আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার আমির মো. শাহেদ আলী, সুনামগঞ্জ জেলার নায়েবে আমির মো. শামস উদ্দিন ও মোমতাজুল হাসান আবেদ, সুনামগঞ্জ পৌর শাখার আমির আবদুস সাত্তার মো. মামুনসহ সংগঠনের বিভিন্ন উপজেলার নেতৃবৃন্দ।