শেখ হাসিনার বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই
শুক্রবার, ০৭ মার্চ, ২০২৫
ফাইল ছবি
সৈয়দ বদরুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে বনানীর হোটেল শেরাটনে জাহাজ শিল্পের এক সেমিনারে অংশ নেওয়ার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনার বিচার চায় না এমন লোক বাংলাদেশে কে আছে আমার জানা নেই। বিচারিক প্রক্রিয়া তো একটা আইনি প্রক্রিয়া…সেটা তো চলতেই থাকবে…তাই না। বিচারিক প্রক্রিয়া হচ্ছে যে, আমরা আইনের শাসনে যদি বিশ্বাস করি বিচারিক প্রক্রিয়া চলছে, চলবে। সেটাতে শেখ হাসিনার শাস্তি তখন হবে, তারপরও হবে। তার (শেখ হাসিনা) অনেক মামলা আছে… এগুলো বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা একটার সমাধান হতেই থাকবে।
আমীর খসরু আরও বলেন, কিন্তু এই বিচারিক প্রক্রিয়ায় সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, এই বিচারিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে নির্বাচনেরও কোনো সম্পর্ক নেই।
আমীর খসরু বলেন, আজকে এটার জন্য হবে না নির্বাচন, কালকে আরেকটার জন্য হবে না, পরশু আরেকটার জন্য হবে না… এ রকম কত কথাই তো শুনছি। এসব কথা-বার্তা বলে নির্বাচন ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পিছিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা পরিষ্কার কথা। আজকে একটা, কালকে একটা আমরা বক্তব্য রাখব এসব বলে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।
আমীর খসরু আরও বলেন, গত ১৬ বছর আমরা নির্যাতিত হয়েছি, অত্যাচারিত হয়েছি, প্রাণ দিয়েছি। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে বিদায় করার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু হবে, বাংলাদেশের জনগণ তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে। দল গঠন করতে পারবে, তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে, তাদের মতামত জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারবে। সুতরাং যেকোনো দল তাদের মতামত নিয়ে আসতে পারে। সেখানে কোনো সমস্যা নেই তো। কিন্তু সেই মতামতের সিদ্ধান্তে আমাদের আসতে হবে। মতামত সবার থাকতে হবে, আমাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব আছে। এটা চাইলেই আমরা কালকে বাস্তবায়ন করতে পারব না। আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে।
আমীর আরও খসরু বলেন, আগে ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসতে হবে… এরপর যেকোনো বিষয় সংসদে আলোচনা হবে, বিতর্ক হবে তারপর সংসদে পাস হবে। সোজা কথা ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব সিদ্ধান্ত আসবে সেখানে কারো তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি এটা প্রস্তাব করছি, এটা হতে হবে, এটা করতে হবে—এই ধরনের মনমানসিকতা যদি থাকে তাহলে তো আবার শেখ হাসিনার কথা মনে পড়ে যায়। ঐকমত্য হলে ভালো কিন্তু ঐকমত্য না হলে আপনাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নেন। এ ছাড়া তো পথ নেই। পথ তো একটাই।
এর আগে বনানীর হোটেল শেরাটনে বলরুমে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনা সভা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শিপ রিসাইক্লিং শিল্প সার্কুলার অর্থনীতির একটি ক্লাসিক উদাহরণ। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমীর খসরু আরও বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে নিরাপদ ও পরিবেসম্মত গ্রিন শিপ রিসাইক্লিং শিল্প পরিচালনার দিকে অগ্রগতি সত্ত্বেও, এই শিল্পের নেতৃত্ব বজায় রাখতে এবং সর্বাধিক রাজস্ব উৎপাদনের জন্য নীতিগত সমর্থন এবং বৈশ্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এই শিল্পের বিকাশে সরকারকে সব ধরনের সাপোর্ট দেওয়া উচিত। আমীর খসরু আরও বলেন, এ দেশটা অতি নিয়ন্ত্রণের দেশ হয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রণ করতে করতে এমন জায়গায় নিয়ে আসছে এই নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ার জন্য যেসব কাজ করতে হয় তার আর ব্যবসা করার স্বপ্ন থাকে না। এই শিল্পকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে, সিরিয়াসভাবে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। যত বেশি সম্ভব সরকারের ভেতর অনেক কাজ বের করে এনে এগুলো ট্রেড বডি যারা আছে সেলফ রেগুলেটিং তাদের সেই ক্ষমতায়ন করতে হবে, ক্ষমতা দিতে হবে।
আমীর খসরু আরও বলেন, আপনারা সেলফ রেগুলেটিং করার জন্য তৈরি হন। আগামী দিনে সরকার পরিবর্তন হলে আমাদের যদি কোনো সুযোগ থাকে আমরা ট্রেডবডিগুলোকে প্রোভাইড করব। সব খানে যত নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা যাবে তত দেশ ভালো চলবে।
বিএসবিআরএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকুর সভাপতিত্বে ও ইয়াসমীন সুলতানার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন, উপরাষ্ট্রদূত খিজস উউস্ট্রা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হুবার্ট ব্লুম, জাইকার শিপ রিসাইক্লিং উপদেষ্টা ওকামোটো আকিরা, বিএসবিআরএর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শওকত আলী চৌধুরী, সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী চৌধুরী, চট্টগ্রাম শ্রমিক দলের এ এম নাজিম উদ্দিন বক্তব্য দেন।