জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনায় জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।
গত শুক্রবার লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে এ দাবির কথা তুলে ধরেন বিএনপির এই নেতা।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, অতিদ্রুত আমরা যাতে ডেমোক্রেটিক ট্রান্সফরমেশনে যেতে পারি সেরকম কার্যক্রম আপনারা নেবেন। সেই হিসেবে লন্ডনের আলোচনার সূত্র ধরে যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে, সেটা খুব শিগগিরই ইলেকশন কমিশনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কমিউনিকেট করবেন বলে আশা করি। যাতে ইলেকশন কমিশন জনগনে সামনে বলতে পারে, তারা সরকারের কাছ থেকে একটা পরামর্শমূলক বা নির্দেশনামূলক ম্যাসেজ পেয়েছে। ’
গতকাল রোববার ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনকে লন্ডনের বৈঠকের বিষয়টি সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, লন্ডনে যে ঘোষণাটা এসেছে অন্যদের মতো সংবাদমাধ্যম থেকেই যেটুকু জানা গেছে, এর বাইরে কিছু নেই। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না—ভেতরে কী আলাপ হয়েছে। শুধু যৌথ বিবৃতি যেটা দিয়েছে সেটা তো আন-সাইনড; এটাই বা কতটুকু জেনুইন, তা-ও তো জানি না। কারও স্বাক্ষর থাকলে বুঝতাম এটা সরকারের পক্ষ থেকে একজন স্বাক্ষর করেছেন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একজন স্বাক্ষর করেছেন। তাহলে বুঝতাম এটা অফিসিয়াল ডকুমেন্ট।’
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অফিসিয়ালি কোনো কিছু না এলে কিছু করা যাবে না। ইতিহাসের পেছনেও ইতিহাস থাকে, আলাপের পেছনেও আলাপ থাকে। ঘোষণা একটা হয়েছে, নিশ্চয়ই ভেতরে অনেক আলাপ হয়েছে। সেগুলোও আমাদের জানতে হবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।’
গত শুক্রবার লন্ডনে বিএনপিনেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হলে ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরুর আগেও ভোট হতে পারে বলে মত দেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকের পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।’
বিএনপিনেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখানে যেহেতু সাইফুল হক ভাই (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির) জিজ্ঞাসা কররেছেন, তাদের দায়মুক্তির বিষয়ে লন্ডনে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা? না, কারও দায়মুক্তির বিষয়ে আমাদের কোনো আলোচনার প্রসঙ্গ ছিল না।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে কনস্টিটিউশনাল লেজিটেমেসি আছে। আর্টিক্যাল ১০৬ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভাইজারি রুল অনুসারে তারা গঠিত হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলী। সংবিধান যেহেতু এখন চালু আছে, সাংবিধানিকভাবে এই সরকার চলছে। সংবিধান যেভাবে বলেছে, উপদেষ্টাগণ মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করবেন এবং মন্ত্রী হওয়ার জন্য আর্টিক্যাল ৬৬ অনুসারে সংসদ সদস্য হওয়ার যে সমস্ত যোগ্যতা থাকতে হয়, সেটা উপদেষ্টামণ্ডলীকে মাথায় রাখতে বলব। সেখানে কিন্তু বিদেশি নাগরিকত্বের বিষয়টি কিন্তু অনুমোদন করেনি এবং আরও অনেক বিষয় আছে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘কনস্টিটিশনালি এই সরকারের রেটিফিকেশন লাগবে ইন দ্য নেক্সট পার্লামেন্ট। এটা আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) মাথায় রাখবেন। রেটিফিকেশন লাগলে এই লেজিটেমেসি কীভাবে দেওয়া হবে, কোন জায়গায় দেওয়া হবে, সেটাও আমরা বিবেচনা করব।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল ও নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।