সৈয়দ বদরুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: চাপ সৃষ্টি করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলা যাবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে জাতীয়তাবাদী যুব দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমাদের সামনে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে নতুন বাংলাদেশ গড়বার, আমরা সেই নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। একটা স্লোগান দিয়েছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান)—সবার আগে বাংলাদেশ। এটার অর্থ কী? এটার অর্থ আমরা কারও কাছে মাথানত করব না। আমরা অন্য কোনো দেশের দিকে তাকিয়ে থাকি না। ’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, আজকে যারাই চেষ্টা করুন বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি করে আমাদেরকে (বিএনপি) বেকায়দায় ফেলার জন্য, সেই চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না। এই দেশের মানুষ লড়াই করেছে, লড়াই করতে জানে, লড়াই করে স্বাধীনতা এনেছে, লড়াই করে গণতন্ত্র রক্ষা করেছে এবং দেশকে মুক্ত করেছে। ’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের শহীদদের, যারাদেরকে আমরা হারিয়েছি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। বাংলাদেশে যুবদল, ছাত্রদল, বিএনপির দিকে তাকিয়ে সাধারণ মানুষ যেন বলে এরা ভালো মানুষ, ভালো দল। যদি না বলে তাহলে কি আমাদের কাজটা ঠিক হবে? হবে না। তাই আমরা সেই দিকে এগিয়ে যাই, যে পথে এগুলে আমরা মানুষকে সুন্দর একটা বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব।’
শাহবাগ চত্বরে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘গ্রাফিতি অংকন’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব নিজে রংতুলি নিয়ে স্ক্যাভাসে গ্রাফিতি আঁকার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইংরেজিতে একটা কথা আছে পাবলিক পারসেপশন, জনমত বা জনগণের ধারণা। এটাই রাজনীতির মূল নিয়ামক। জনগণ কী ভাবছে? এই যে আমার ভাই ওখানে ভ্যানে ফল বিক্রি করছেন, ওই যে আমার ভাই রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রিকশা চালাচ্ছেন অথবা আমার ভাই যিনি সবজি বিক্রি করছেন তিনি কী ভাবছেন? আপনারা কি কখনো তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন, ভাই যুদ্ধ তো একটা হয়ে গেল আমরা হাসিনাকে তাড়ালাম; এই যে গ্রাফিতি করছি, বড় বড় বই ছাপাব, আপনার মতমতটা কী? বাংলাদেশের পরিবর্তনটা কী হলো? জিজ্ঞাসা করেন তাকে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যদি সত্যিকার অর্থে এই দেশকে পরিবর্তন করতে চান, তাহলে তাকে (জনসাধারণকে) জিজ্ঞাসা করতে হবে, সে কী চায়? আমার ভ্যানচালক কী চায়? তার অবস্থার কতটা পরিবর্তন হয়েছে? আমার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তার ব্যবসার কতটা পরিবর্তন হয়েছে? আজকে এই কথাগুলো বলছি এজন্য, আজকে এর প্রয়োজন এসে গেছে।’
সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা প্রতি মুহূর্তে সংস্কারের কথা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন ইনডাইরেক্টিলি। বলা হচ্ছে আমরা কমপ্রোমাইজ করছি না। এই কথাগুলো সঠিক নয়। আমরা সারাক্ষণ এই সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সহযোগিতা করছি, আমরা সারাক্ষণ সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।’
হাসিনার বিচার শুরু হলো না কেন, প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোথায় হাসিনার বিচার? এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কিছু দেখতে পেলাম না। এক বছর হয়ে গেল হাসিনার বিচার কাজ শুরু হলো না কেন? এখনও পর্যন্ত সেই সমস্ত হত্যাকারীদের যারা প্রকাশ্যে হত্যা করেছে, বিবিসির প্রতিবেদনে অডিওতে দেখাচ্ছে—হাসিনা নির্দেশ দিচ্ছে গুলি করার, এগুলো কেন এখন পর্যন্ত আসেনি?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্লিজ এই বিষয়গুলোকে আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা দয়া করে সামনে নিয়ে আসেন। এই সাংবাদিকরা আপনারা অত্যন্ত ভালো কাজ করেছেন, অনেক কিছু দিয়েছেন, অনেকে এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। আপনারা বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অধিকারের আন্দোলনে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, লড়াই করেছেন।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে তর্ক-বির্তক করছি, এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে কোন্দলে লিপ্ত হয়েছি, যা বাংলাদেশকে আরও পিছিয়ে ফেলে দিতে পারে। ফ্যাসিস্টদের শক্তি জোগাতে পারে, ফ্যাসিস্টদের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে, আবার নতুন করে বাংলাদেশের ওপর চেপে বসার।’
গত ১৫ বছর বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনের কথা তুলে ধরে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের অনেকের ওপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে, তাদের ছবি তো আমাদের সাংবাদিকরা ছাপে না। প্লিজ সাংবাদিক ভাইদের বলব, কালোকে কালো বলবেন সাদাকে সাদা বলবেন এবং যার যা অবদান আছে সেই অবদানকে স্বীকার করবেন। আমরা কেউই মুচলেকা দেইনি শত অত্যাচারের মুখেও।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই জুলাইয়ের আন্দোলনে যুব দলের ৭৯ জন শহীদ হয়েছেন, ছাত্রদলের ১৪২ জন শহীদ হয়েছে, গোটা বাংলাদেশে সেদিন নেমে এসেছি। শুধু কয়েকটি দল, কয়েকজন ছেলে-ছাত্র নয়, শিশু থেকে শুরু করে নব্বইয়ের বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিল। এই যে ত্যাগ, দুই হাজারের ওপরে মানুষ হারালাম, ছেলেদের হারালাম, আমাদের নেতাকর্মীরা পঙ্গু হলো, চোখ হারালো, তার একটাই লক্ষ্য–ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করে এই দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, একটা ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে যখন পত্রিকায় দেখলাম, বেদনায় একেবারে নীল হয়ে গেছি। দেখলাম পাঁচজন সমন্বয়কারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা জোর করে একটি বাড়ি থেকে একজন সাবেক সংসদ সদস্যের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে নিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই পরিণতি কি আমরা চেয়েছিলাম? এই বাংলাদেশের কেউ কি এটা চেয়েছিল? এত তাড়াতাড়ি যদি এই ঘটনা ঘটে একবছরও হয়নি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত কী? প্রিয় সহকর্মী যোদ্ধারা (যুবদলের নেতাকর্মী) এই কথাগুলো এজন্য বলছি, গোটা বাংলাদেশ তোমাদের দিকে চেয়ে আছে। তরুন-যুবক যারা বদলে দিযেছে, যারা পাল্টে দিয়েছে সেই হাসিনাকে ক্ষমতার পতন ঘটিয়ে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছে, তাদেরকেই তো এদেশ গড়ে তুলতে হবে, তাদেরকেই তো এদেশকে নির্মাণ করতে হবে, তাদেরকে ভবিষ্যতে একটা সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে, মানবতার ভিত্তিতে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দুঃখ হয় আমাদের যখন আমরা দেখি, এক বছর সময়ের মধ্যেও আমরা একথা জোর গলায় বলতে পারছি না—আমরা তৈরি হয়ে গেছি। এদেশ আমরা নতুন করে গড়ে তুলব। আমাদের নেতা তারেক রহমান সেই সুদূরে থেকে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, সংগঠিত করবার চেষ্টা করছেন, আমাদেরকে আন্দোলনে নামিয়ে ফ্যাসিস্টদের পতন করে এখনও তিনি চেষ্টা করছেন, কাজ করছেন বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য।’
জাতীয়তাবাদী যু্ব দলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে দেন। অনুষ্ঠানে যুব দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।