আজ মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ ||
৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন
দেশের জনগণ ভোটের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে : সালাহউদ্দিন
সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫
ফাইল ছবি
সৈয়দ বদরুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের জনগণ ভোটের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের নামে অনৈক্য তৈরির চেষ্টা হয়েছে। তবে আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়টিকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
জাতীয় সার্বভৌমত্বকে কখনো কোনো আদেশ দিয়ে তো বাধ্য করা যায় না। কারণ দেশের সর্বোচ্চ সার্বভৌমত্ব হলো জাতীয় সংসদ। মানুষ ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। জুলাই সনদে গণভোট নিয়ে যেসব প্রশ্ন করা হয়েছে তাতে মনে হয় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা লোকেরাও সেটি পড়তে অনেক সময় লাগবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে একটি আদেশ জারি হয়েছে। দেশে আদেশ জারির কোনো ইতিহাসও নেই এবং এ ধরনের আদেশের ভবিষ্যৎ নেই। এ বিষয়ে সাংবিধানিক আইনি বৈধতা নেই। এদের (সরকার) উদ্দেশ্যে হলো- একটি লিগ্যাল কেওয়াজ তৈরি করা।
আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, শেষ পর্যন্ত সবাইকে জনগণের কাছে যেতে হবে নির্বাচনের জন্য। কারণ আমরা গত ১৫/১৬ বছর আন্দোলন করেছি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। দেশের মানুষ ভোটের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটি জাতি ও দেশ তৈরি করতে হবে যাতে কোনো ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারের উত্থান না ঘটে। স্বাধীন বিচার বিভাগ, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তবে স্বৈরাচারের দোসরদের বহাল রেখে স্বাধীন বিচার বিভাগ সম্ভব নয়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতি গঠনে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। ৩১ দফা রূপরেখা সেটিরই উদ্যোগ। আমরা একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ নেব। দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা সবকিছুকেই পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যেভাবে করা হয়েছে। আমরা প্রায় বলে থাকি যদি কোনো দেশকে ধ্বংস করতে চাও তবে তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করো। গণহারে জিপিএ ফাইভ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। এদেশে যেভাবে কালচারাল হেজিমনি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল তার সঙ্গে ব্রিটিশদের মিল রয়েছে। আমাদের দেশে এমন জাতি তৈরি করা হয়েছে যে, তারা রক্তে ও মাংসে বাংলাদেশি কিন্তু চিন্তা ভাবনায় ভারতীয়। খুব সূক্ষ্মভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তায়ন করা হয়েছে। দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় তারা সেটি করেছে। অথচ শেখ হাসিনা যেভাবে জোরপূর্বক গুম খুন করে একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল সে বিষয়ে কিন্তু ওই বুদ্ধিজীবীরা লেখেন না, বলেন না। সেই বুদ্ধিজীবীরা কিন্তু দেশেই আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের উদ্যোগে “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপান্তর: একটি কৌশলগত রোডম্যাপ” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন সেমিনার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমএ কাউসার ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ঢাবির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ, ঢাবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস, অধ্যাপক আতাউর রহমান মিয়াজী, ড. মো. নূরুল আমিন, চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় দে রিপন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম ও অধ্যাপক জাফর আহমেদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, অধ্যাপক ড. আবদুল করিম, অধ্যাপক ড. আবদুর রশিদ, অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার, শাবিপ্রবির অধ্যাপক খায়রুল ইসলামসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ ও ঢাবির প্রক্টরিয়াল টিম এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রভোস্টবৃন্দ।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যারা শিক্ষকতা করেন তারাই তো জাতি গঠনের কারিগর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাগলে বাংলাদেশ জাগে। এখানেই কিন্তু আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি প্রতিষ্ঠা না হতো ইতিহাস বলে- ৪৭ হতে দেরি হতো, যদি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ না হতো তাহলে ৭১ হতে দেরি হতো। শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত সমাজ তৈরি হয়েছিল বলেই স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রয়োজন ভিত্তিক সিলেবাস তৈরি করতে হবে। সবাইকে মাস্টার ডিগ্রি পাস হতে হবে এটি যেন নিয়ম হয়ে গেছে। অথচ বিদেশে কিন্তু তা নয়। আমাদের মানসিক সংস্কার দরকার। তাই না হলে তো যত সংবিধান বা আইনের সংস্কার করি না কেনো কাজ হবে না। বেসিক স্ট্রাকচারের নামে খায়রুল হকের রায়ের কারণে ২ হাজারের বেশি তরুণ প্রজন্মকে জীবন দিতে হয়েছে। অসংখ্য মানুষ আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাহলে সেফটি কোথায়? আমাদের সামাজিক সংস্কারও দরকার।