মব সৃষ্টি করে চেয়েছিল হাদি মারা যাক,আমি ঢাকার ছেলে রাজপথে মিছিল করে বড় হয়েছি : মির্জা আব্বাস
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস
সৈয়দ বদরুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যারা গতকাল শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) মব সৃষ্টি করেছিল, তারা চেয়েছিল হাদি মারা যাক– এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা-৮ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধের প্রতিবাদ এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভমিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
মির্জা আব্বাস বলেন, হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছে সোয়া দুইটায়, ঠিক আড়াইটার সময় ফেসবুকে পোস্ট আসলো– সবাই ঐক্যবদ্ধ হও, কোনো একটা বাসায় যেতে হবে, ইট খুলে নিয়ে আসতে হবে। কত পরিকল্পিত!
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, আমি যখন হাসপাতালে যাই, তখন তারা আক্রমণাত্মক স্লোগান দিচ্ছিল। আমি ঢাকার ছেলে, রাজপথে মিছিল করে বড় হয়েছি। আমি শান্ত থেকেছি, নীরব থেকেছি। যদি ওই সময় আমার নির্দেশনা পেত, তাহলে তোমাদের তুলোধুনো করতো। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো– এরা কেউই হাদির সমর্থক নয়, এরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের কর্মী। অনেকে অনেক বেয়াদবি করেছে। আমার সঙ্গে যারা সিকিউরিটি ছিল সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছি, যেন চিকিৎসা ব্যাহত না হয়। চিকিৎসা ব্যাহত করা যাবে না, তাকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যারা মব সৃষ্টি করেছিল, তারা চেয়েছিল হাদি ওখানেই মারা যাক। আমরা চেয়েছি আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে তুলুন, দীর্ঘায়ু দান করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র দেখেছি, এদের ৭১’এ দেখেছি, ৪৭’এ শুনেছি এদের ষড়যন্ত্রের কথা। ৭১’, ৮৬’, ৯০’, ৯১’– সকল সময়েই এই দলটি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকে। ষড়যন্ত্রবিহীন এই দল কখনও চলতে পারে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, হাদি আমার সন্তান সমতুল্য। স্নেহভাজন এই ছেলের ওপর আঘাত করাতে আমি মানসিকভাবেও অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
হাদির ওপর আঘাতের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, হাদির ওপর আঘাত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আঘাত, সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। এই আঘাত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপর। অপশক্তিকে প্রতিরোধ করতে হবে, কালো হাত ভেঙে ফেলতে হবে, দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমার জীবনে কোনো রেকর্ড নাই প্রার্থীরা কোনো মারামারি করেছি। রেকর্ড আছে আওয়ামী লীগের, আর রেকর্ড আছে ওই একটা অপশক্তির, যারা বরাবর ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে।
আসল দুর্বৃত্তরা যেন সাজা পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষের সামনে বিশেষ একটা রাজনৈতিক দলের মুখোশ উন্মোচিত হোক, এটাই আমি চাই।
আবারও হাদিকে নির্বাচনের মাঠে দেখতে চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাদি আমার প্রতিযোগী, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, শত্রু নয়। হাদি রাজপথে আমারই মতো একজন লড়াকু সৈনিক।
মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও কঠিন সময় পার করছি উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা বলেন, আগে শত্রু ছিল একটি, এখন বহুমুখী শত্রুতে জর্জরিত। যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন, তারা সাবধান হয়ে যান। নইলে এ দেশের জনগণ কিন্তু আপনাদের মাফ করবে না।
হাদির ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, এটা বৃহৎ চক্রান্তের ছোট একটি অংশ। চক্রান্তের আরও ষড়যন্ত্র সামেনে প্রকাশ পাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসময় বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, শেখ রবিউল আলম, হাবিবুর রশিদ হাবিব, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল কবির পল প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর ফকিরাপুল মোড় ঘুরে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।