ভারতের মদদ ছাড়া আ.লীগ এই ধরনের পরিকল্পনা করতে পারে না : নাহিদ
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম
লিটন মোল্লা, নিজস্ব প্রতিনিধি: ভারতের মদদ ছাড়া আওয়ামী লীগ এই ধরনের পরিকল্পনা করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে বৈঠক শেষে যমুনার সামনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সব পরিকল্পনা করছে দিল্লিতে বসে। ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ ছাড়া আওয়ামী লীগ এই ধরনের পরিকল্পনা করতে পারে না। জঙ্গি তৎপরতা করছে। ফলে অবশ্যই আমাদের এখানে যারা ভারতীয় দূতাবাস আছে, তাদের অ্যাকাউন্টেবল (জবাবদিহি) করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ডেকে বলতে হবে যে–সেখানে একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত গণহত্যাকারীকে ভারত সরকার আশ্রয় দিয়ে অলরেডি তারা একটা নৈতিক অপরাধ করেছে। এখন তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সেই আওয়ামী লীগকে সহায়তা করছে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আমাদের নেতা-নেত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে হবে না, নেতাদের নিরাপত্তা দিয়ে জুলাই টিকে থাকবে না। সামগ্রিকভাবে সমাজ থেকে, রাজনীতি থেকে যদি আওয়ামী লীগের প্রশ্নের সুরাহা আমরা করতে না পারি, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে আমরা যদি গণপ্রতিরোধ বজায় রাখতে না পারি, তাহলে আসলে আমরা-আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, জনগণই আমাদের নিরাপত্তা। সেই জনগণের কাছেই আমাদের নিরাপত্তা নিতে হবে। রাজনৈতিক দায়িত্বটা আমাদের পালন করতে হবে। সরকার অবশ্যই প্রশাসনিকভাবে করবে। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের লোকেরা আছে, পুলিশের বিভিন্ন জায়গায় আছে এবং মিডিয়া থেকে শুরু করে নানান ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগ আসছে। সরকারকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে কাজ করা জরুরি। তিনি কোর্টপাড়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় থাকা সব ফ্যাসিবাদবিরোধী দলকে নিজ নিজ মতাদর্শী লোকজনকে একত্রিত (মোবিলাইজ) করার আহ্বান জানান।
এনসিপির এই নেতার মতে–এই প্রতিরোধ কেবল রাজনৈতিক মাঠের জন্য নয়। বরং বিভিন্ন সেক্টরে (যেমন-কোর্ট, মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়, এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গন) সম্মতি তৈরি করা হচ্ছে। এই জায়গাগুলোতে আওয়ামী লীগকে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে।
পাশাপাশি তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে এবং ভারতকে জবাবদিহি (অ্যাকাউন্টেবল) করার পদক্ষেপ নেয়। এই তিনটা জায়গায় যদি আমরা কাজ করতে পারি, সুষ্ঠু নির্বাচন স্বার্থে এই তিনটা জিনিস আমাদের অবশ্যই বলা লাগবে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, তিনটি দলের নেতাদের ডেকেছিলেন। আমরা একত্রে আলোচনা করেছি। সেখানে শরিফ ওসমান হাদি তার পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। তার মা ছিলেন। মূলত এটা গতকালকের যে ঘটনা এটাতো শুধু আসলে একজন ব্যক্তির সঙ্গে বা একজন প্রার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা না। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনাও না। এই ষড়যন্ত্র ছক আঁকছে নির্বাচনকে ঘিরে। সেটার একটা শুরু বলা যেতে পারে। ফলে এই পরিবেশ আমরা কীভাবে একত্রে মোকাবিলা করব এবং সেটার জন্য যেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন সেটা যাতে অটুট থাকে। আমরা জানি নির্বাচনের রাজনীতিতে আমরা প্রতিযোগিতা করব, প্রতিদ্বন্দীতা করব, একে অন্যের বিরুদ্ধে হয়তো বলব কিন্তু সেটা যাতে কখনোই একটা সীমাকে অতিক্রম না করে। আওয়ামী লীগকে যাতে কোনো সুযোগ-সুবিধা করে না দেয়, এই ব্যাপারে আমরা সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে ভেরিফাই করা হচ্ছে, মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় টকশোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতির মাঠে আসার একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, নরমালাইজিং প্রসেস আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখছি আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা গোপন মিটিং করার সুযোগ পাচ্ছে। আমরা কোর্ট পাড়ায় দেখতে পাচ্ছি যে জয়বাংলা স্লোগান হচ্ছে। আমরা টকশোতে দেখছি এরকম আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবীরা আসছে। আমরা ভোটের মাঠে দেখছি যে জাতীয় পার্টিকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। একটা পরিকল্পিত আয়োজন আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীরা নানা নামে কিন্তু আওয়ামী লীগ সমাজে কথা বলার চেষ্টা করছে, কাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা বলেছি, সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সে আস্থাটা থাকতে হবে, যাতে তারা সবাইকে নিরাপত্তা দিতে পারে। অবশ্যই ওসমান হাদিকে যারা হত্যাচেষ্টায় জড়িত, আমরা তাদেরতো অবিলম্বে আজকের মধ্যে আমরা গ্রেপ্তার চেয়েছি এবং শুধু তারাই নয় বরং এই পরিকল্পনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও যাতে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়।