আজ মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ||
২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার, ০২:০০ পূর্বাহ্ন
মামলা তুলে নিতে ২ লাখ টাকা চায় এসআই!
শনিবার, ২২ জুলাই, ২০২৩
আহসান হাবিব, সাভার: আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করার পর সমঝোতায় এসে সেই মামলা ‘তুলে নিতে’ চায় বাদী পক্ষের লোকজন। তবে এই মামলা তুলে নেওয়া বা আপোষ করার ক্ষেত্রে বাধ সেজেছে সাভার মডেল থানার পুলিশের এক কর্মকর্তা।
মামলা তুলে নিতে সহায়তার জন্য দুইলাখ টাকা দিতে হবে সেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে। এমনই অভিযোগ তুলেছেন মামলার বাদী ও বিবাদী পক্ষের লোকজন।
গত বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৪টায় সাভার আড়াপারা কামাল রোডে শাহজাহানের বাড়িতে ভুক্তভোগীর ভাড়া বাসায় গিয়ে টাকা চেয়ে হুমকি দেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম ও তার সহযোগী পুলিশ সদস্যরা। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগীরা এ তথ্য জানান।
এরআগে, গত ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর সাভারের বিনোদবাইদ ভাড়া বাসায় নিজ কক্ষে আত্মহত্যা করেন সীমা বেগম। পরে ৯ নভেম্বর তার ভাই সুমন মিয়া সাভার মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার একটি মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলায় প্রধান আসামি সৌদি প্রবাসী সীমার স্বামী রবিউল ইসলাম। এছাড়া বাকি আসামিরা হলেন রবিউলের দ্বিতীয় স্ত্রী রুবি, রবিউলের মা সজিনা বেগম, রবিউলের দুই বোন জুলেখা বেগম ও শিখা।
নিহত সীমার মেয়ে সাথী বলেন, পুলিশ আমাদের বাসায় সেই মামলার বিষয়ে পাঁচবার এসেছিল। বাসায় এসে শুধু টাকার কথা বলে। পুলিশ বলে মামলা তুলে নিতে হলে দুইলাখ টাকা লাগবে। বিষয়টি নিয়ে আমি আমার স্বামীকে বলেছি দেখে পুলিশ আমাকে অনেক ধমকিয়েছে। আর বলছে, এই দুইলাখ টাকার কথা যদি কেউ জানে বিপদ হয়ে যাবে, সমস্যা হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, টাকা না দিয়ে মামলা যদি না উঠানো হয়, তবে বড় কিছু হয়ে যাবে। ফাঁসি হয়ে যাবে। শহিদুল নামের পুলিশ এসব বলছেন। আজও তিনি বাসায় এসেছিলেন। এসে বলেন, যদি টাকা দাও মামলা উঠবে, আর যদি টাকা না দাও মামলা উঠবে না। আমার দাদি এখনও মামলায় হাজিরা দেন। তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল, তিনি এখন জামিনে আছেন।
নিহতের ভাই ও মামলার বাদী মো. সুমন মিয়া বলেন, গত বছর অক্টোবরের ৮ তারিখে আমার বোন আত্মহত্যা করে মারা যান। পরে আমি সেই সময় একটি হত্যা মামলা করেছিলাম। মাস দুই এক আগে পুলিশ খবর নিতে এসেছিল। তখনই আমার বোনের মেয়ে বলেছে মামলা উঠিয়ে ফেলব। তখন দারোগা বলেছিলেন যে, দুইলাখ টাকা দিলে মামলা এখনই উঠিয়ে দেব। আমরা মামলা তুলে ফেলতেই চাই। কিন্তু শহিদুল পুলিশ এখন টাকা চায়।
এ বিষয়ে মামলার তিন নম্বর আসামি নিহত সীমা বেগমের শাশুড়ি সজিনা বেগম বলেন, আমি এ মামলার ঘটনায় জামিনে আছি। আমার নাতিনের বাসায় দুই দিন পরপরই আসে এসআই। কালকেও এসেছিলেন। এসআই বাসা থেকে রাগারাগি করে গেছেন। আবার আসবেন বলেছেন।
তিনি বলেন, এমনিতে আমার আমরা অভাবী মানুষ। আমার নাতিও ছোট মানুষ। এর মধ্যে পুলিশ এসে অত্যাচার করছে। ঘটনার সময় একটি মামলা করে ফেলেছে এখন তারাই মীমাংসা করছে। এটা নিয়ে পুলিশ ঝামেলা করছে।
টাকা চাওয়ার এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম , এই মামলা তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। মামলাই নেই শেষ হয়ে গেছে।
আপনি নিহতের মেয়ে সাথীদের বাসায় শেষবার গিয়েছিলেন কেন? এমন প্রশ্নের তিনি উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপর কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) তার সঙ্গে এক কথোপকথনে সাথীদের বাড়িতে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন এসআই শহিদুল ইসলাম।
সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিপক চন্দ্র বলেন, যদি আমার কাছে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেন অবশ্যই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়টি সম্পর্কে জেনে পরে জানাতে পারব।