এরপর আবার দুইটা কিনলে আরও দুইটা ফ্রি, চারটা কিনলে আরও চারটা ফ্রি পাবে এমন অফার আসে।
কিন্তু এক পর্যায়ে যখন গ্রাহক অধিকসংখ্যক যেমন- ৮টা মোটরসাইকেল কিনলে আরও ৮টা মোটরসাইকেল পাওয়ার জন্য টাকা দেয়, তখন সে টাকা চলে যায়। কিন্তু মোটরসাইকেল আর আসে না। ই-কমার্স এভাবে প্রতারিত হওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরাও কম দায়ী নন। এটি তাদের অতি লোভের পরিণতি। যখন ২ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো অফার দিয়েছে, তখন কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে না পড়ে দশবার ভাবতে হতো। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অভিযুক্ত মালিকপক্ষের হাতে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ সরকার রেশিও অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বণ্টনের উদ্যোগ নিতে পারে। এছাড়া আইন অনুযায়ী এই ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকার কিংবা অন্য কারও দেওয়ার কথা নয়। সুযোগও নেই। এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে করার জন্য সরকারের তরফ থেকে প্রশাসক বসিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে এসব অর্থসম্পদ নিয়ে কেউ নয়ছয় করতে না পারে, এর রক্ষাকবচও থাকতে হবে।
এভাবে প্রতারিত হওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরাও কম দায়ী নন। এটি তাদের অতি লোভের পরিণতি। যখন ২ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো অফার দিয়েছে, তখন কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে না পড়ে দশবার ভাবতে হতো। কেননা দেশে এ ধরনের প্রতারণা নতুন কিছু না। সেই কোটচাঁদপুরের হুন্ডি কাজল থেকে শুরু করে যুবক, ডেসটিনি-কাণ্ডের মতো হায় হায় কোম্পানির বড় বড় প্রতারণার ঘটনা সবার চোখের সামনেই ঘটেছে। তবে এ কথাও ঠিক যে, যখন এসব প্রতিষ্ঠান চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তখনই সরকারের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। সরকার যেহেতু রাষ্ট্রের অভিভাবক, তাই অভিভাবক হিসাবে ব্যর্থতার দায় তো রয়েছে। তারা মনে করেন, এ বিষয়ে বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান আরও যুগোপযোগী করে তা কঠোরভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।
ই-কমার্স প্রতারক প্রতিষ্ঠানের জন্য রাষ্ট্রের করণীয় হলো এদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর না হয়, এজন্য নতুন একটি আইন করে তা যথাযথভাবে কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া। এছাড়া সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা বিক্রির মাধ্যমে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ যথাসম্ভব মিটিয়ে দেওয়া। জানা যায়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে দেশে পৃথক কোনো আইন নেই। এমন সুযোগ নিয়েই ইভ্যালিসহ ১১টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ই-অরেঞ্জ হাতিয়ে নিয়েছে ১১০০ কোটি, ই-ভ্যালি ১ হাজার কোটি, ধামাকা ৮০৩ কোটি, এসপিসি ওয়ার্ল্ড ১৫০ কোটি, এহসান গ্রুপ ১১০ কোটি, নিরাপদ ডটকম ৮ কোটি, চলন্তিকা ৩১ কোটি, সুপম প্রোডাক্ট ৫০ কোটি এবং কিউ ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং ১৫ কোটি টাকা। এ তালিকায় এর বাইরে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে তালিকাভুক্ত ১ হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ই-ক্যাবের হিসাবে এ সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। তবে অধিকাংশের লাইসেন্স নেই। শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে তারা ইকমার্স পরিচালনা করছে। অন্য কোনো জায়গা থেকে এসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করা হচ্ছে না। অবশ্য এরই মধ্যে কিছু রুলস অনুসরণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার মতে, নিবন্ধনের আওতায় এলে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরধারি বেশি করা সম্ভব হবে।
স্বল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার রঙিন স্বপ্নে বিভোর হওয়া। পরিণামে সহায় সম্বল হারানো। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব ঘটনা তথা প্রতারণা থেকে বাঁচতে অধিক মুনাফার লোভ সংবরণ করতে হবে।