শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সিএনএন বিডি ২৪.কম: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার দীর্ঘতম অচলাবস্থার কারণে বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রকের (এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার) ঘাটতিতে পড়ায় ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ফ্লাইট সময়সূচি কমানোর নির্দেশ দিয়েছে। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এই ব্যাপক ফ্লাইট বাতিলের ফলে যাত্রীদের মধ্যে তীব্র দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ফ্লাইট বাতিলের কারণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সরকারি কাজ বন্ধ (শাটডাউন) এখনও চলছে এবং এটি এখন সবচেয়ে লম্বা শাটডাউন হিসেবে রেকর্ড করেছে। এই সমস্যার সমাধানের কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না, কারণ দেশের সংসদ বা কংগ্রেস সরকারি খরচের জন্য একটি নতুন বিলে (ফেডারেল তহবিল বিল) একমত হতে পারেনি।
কর্মী সংকট : বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রকসহ লাখ লাখ ফেডারেল কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে অনেকেই। বর্তমানে ১৩ হাজার বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক এবং ৫০ হাজার নিরাপত্তা স্ক্রিনার বেতন ছাড়াই কাজ করছেন।
চাপ কমানোর উদ্যোগ : কর্মীদের ওপর চাপ কমাতে পরিবহণ সচিব শন ডাফি এই মাসের শেষে ব্যস্ত থ্যাঙ্কসগিভিং মরশুমের আগে ফ্লাইট কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। তিনি এক্স-এ পোস্টে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত রাজনীতির জন্য নয়, বরং সিস্টেমে ভবন নির্মাণের ঝুঁকি কমানোর জন্য, কারণ কন্ট্রোলাররা বেতন ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এভিয়েশন বিশ্লেষণ সংস্থা সিরিয়ামের অনুমান অনুসারে, প্রায় এক হাজার ৮০০ ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে, যা দেশের বিমানের দুই লাখ ৬৮ হাজার আসন হ্রাস করবে। তবে এখন পর্যন্ত পরিকল্পিত বাতিলের ফলে কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট প্রভাবিত হয়নি।
বাতিলের মেয়াদ : বাতিলকরণ কতক্ষণ অব্যাহত থাকবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
যেসব বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হবে
দেশের ব্যস্ততম চল্লিশটি বিমানবন্দর এই ফ্লাইট বাতিলের কারণে প্রভাবিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে—
নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সি : জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, লাগার্ডিয়া বিমানবন্দর, নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও টেটারবোরো বিমানবন্দর।
ক্যালিফোর্নিয়া : লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ওকল্যান্ড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, অন্টারিও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
ফ্লোরিডা : ফোর্ট লডারডেল/হলিউড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, অরল্যান্ডো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও টাম্পা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
ভার্জিনিয়া এবং ওয়াশিংটন ডিসি : রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটন জাতীয় বিমানবন্দর, ওয়াশিংটন ডুলস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
ইলিনয় (শিকাগো) : শিকাগো মিডওয়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শিকাগো ও'হেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
টেক্সাস : ডালাস লাভ ফিল্ড, ডালাস/ফোর্ট ওয়ার্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, হিউস্টন হবি বিমানবন্দর, জর্জ বুশ হিউস্টন ইন্টারকন্টিনেন্টাল বিমানবন্দর।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর : হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (জর্জিয়া), বোস্টন লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ম্যাসাচুসেটস), শার্লট ডগলাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (উত্তর ক্যারোলিনা), ডেনভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কলোরাডো), ডেট্রয়েট মেট্রোপলিটন ওয়েন কাউন্টি বিমানবন্দর (মিশিগান), ফিলাডেলফিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (পেনসিলভানিয়া), সিয়াটেল/টাকোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ওয়াশিংটন), ফিনিক্স স্কাই হারবার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (অ্যারিজোনা) সহ আরও অনেক বিমানবন্দর।
যাত্রী এবং এয়ারলাইনস কী করতে পারে?
এয়ারলাইনসগুলো জানিয়েছে, তারা মূলত যেসব রুটে ঘন ঘন ফ্লাইট চলে, সেখান থেকেই বেশিরভাগ ফ্লাইট বাতিল করবে। এর উদ্দেশ্য হলো, যাত্রীদের যাতে খুব কম সমস্যায় পড়তে হয় ও তাদের জন্য সহজে বিকল্প ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা যায়।
পরিবহন বিভাগ জানিয়েছে, যেসব যাত্রীর ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, এয়ারলাইনসকে তাদের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দিতে হবে। তবে, খাবার ও হোটেল থাকার ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক খরচগুলো কভার করা হবে না, যদি না বিলম্ব বা বাতিলকরণ ক্যারিয়ারের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ফ্রন্টিয়ার এয়ারলাইন্সের সিইও সুপারিশ করেছেন, ভ্রমণকারীরা অন্য এয়ারলাইন্সের ব্যাকআপ টিকিট কিনে রাখতে পারেন।
কখন পরিষেবা পুনরায় শুরু হবে?
কংগ্রেসের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বিলটি অনুমোদন করলে ও সরকারি পরিষেবার জন্য তহবিল প্রকাশ করা হলেই পরিষেবা পুনরায় শুরু হবে। রিপাবলিকান সাউথ ক্যারোলিনা রাজ্যের সিনেটর টম ডেভিস আল জাজিরাকে বলেছেন, রিপাবলিকানরা ব্যয় বৃদ্ধি গ্রাস করবে না ও আমরা এখানে বসে আছি যতক্ষণ না কেউ চোখ বুলিয়ে নেয়।