গত ১১ বছর যেসব বিচারক পাবনায় দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে কেউ ভাড়া বাড়িতে অথবা সার্কিট হাউসে বসবাস করেছেন। এতে করে বিচারিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী।
প্রায় শত বছরের পুরাতন বাসভবনটি গত ২০১৪ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে পাবনা গণপুর্ত অধিদপ্তর। ব্রিটিশ সরকারের সময়ে আদালত ভবন তৈরী করার সময় আদালত ভবন থেকে মাত্র ৩শ গজ দুরুত্বে বিচারকের বাসভবনটি নির্মান করা হয়। ২০১৪ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনার পর থেকে সেখানে কোন বিচারক বসবাস করেননি। এদিকে গণপুর্ত বিভাগ পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেই তারা দায়মুক্তি নিয়েছেন। গত এক যুগ জেলার সর্বোচ্চ বিচারকের বাসভবন পুননির্মাণ বা মেরামতের উদ্যোগ গ্রহন করেননি তারা। বিগত দিনে যে সকল বিচারক পাবনায় দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে কেউ থেকেছেন ভাড়া বাসায় অথবা কেউ থেকেছেন সার্কিট হাউসে। নিরাপত্তার অভাবে ও মানসিক চাপে জেলা ও দায়রা জজ এর বিচারক দীর্ঘদিন ধরে বিচারকার্য স্বাভাবিক ভাবে করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবিরা। দীর্ঘদিন ধরে পাবনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গুরুত্বপুর্ন মামলার রায় দিতে দেখা যায়নি।  ফলে এক দিকে মামলার জট বেড়েছে অন্যদিকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিচার প্রার্থীরা। 
জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেন, একজন বিচারক যদি স্থির মস্তিস্কে থাকতে না পারেন, তার থেকে ন্যায় বিচার আশা করা যায় না। তার জীবন যাত্রা যদি স্বাভাবিক না থাকে, তার থাকা খাওয়া নিয়ে যদি চিন্তা করতে হয়, বিচারকের যদি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও নিরাপত্তা নিয়ে টেনশনে থাকতে হয়, তার থেকে সুষ্ট বিচার বা ন্যায় বিচার আশা করা যায় না।
পাবনা জজ কোটের সিনিয়র আইনজীবি এ্যাডভোকেট সনৎ কুমার বলেন, বিচারক যদি নিজেকে নিরাপদ না ভাবেন, তাহলে তার থেকে ন্যায় বিচার আশা করা যায় না। ভাড়া বাড়িতে থেকে বা সার্কিট হাউজে বসবাস করে বিচারকার্য পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।  
পাবনা জজ কোটের জিপি এ্যাডভোকেট আরশেদ আলম বলেন, স্বাভাবিক জীবন যাপন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে ও মামলার জট কমাতে জেলা ও দায়রা জজের বাসভবন দ্রæত পুর্ননির্মান জরুরী হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার যেন দ্রæত জেলা জজ সাহেবের বাড়িটি পুর্ন নির্মান করে তাকে স্বাভাবিক ভাবে আদালত পরিচালনার পরিবেশ তৈরী করে দেন। 
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্রæনাল এর পিপি এ্যাড: নাজমুল হোসেন শাহীন বলেন, পাবনার জেলা ও দায়রা জজ ২০১৪ সাল থেকে বাড়া বাসা বা সার্কিট হাউজে বসবাস করছেন, শান্তিপুর্ণভাবে যদি একজন ফযুভাল বসবাস করতে না পারেন, তাহলে তার কাছে থেকে পিসফুল বিচার আশা করা যায় না। এ জন্য পাবনার মানুষ সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিগত সরকার উন্নয়নের কথা বললেও বিগত ১১ বছর জেলা ও দায়রা জজে সাহেবের বাড়িটি পরিত্যাক্ত থাকলে তা পুর্ন নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। বর্তমান সরকারের  কাছে দাবি করেন, দ্রত জেলা ও দায়রা জজ সাহেবের বাসভবনটি নির্মান করে তাকে পরিবারসহ বসবাসের সুযোগ করে দিয়ে পিসফুলি বিচার পরিচালনা করার সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করেন। 
পাবনা জেলা বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক আবু ওবায়দা শেখ তুহিন বলেন, ভাড়া বাসায় বা সার্কিট হাউসে থেকে ন্যায় বিচার করা সম্ভব না। তাই দ্রæত জেলা জজ সাহেবের বাড়িটি নির্মান করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার আহবান জানান। 
এ ব্যাপারে গণপূর্ত পাবনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ কবিরের কাছে জেলা ও দায়রা জজ এর বিচারকের বাসভবন দীর্ঘদিন  ধরে পরিত্যাক্ত এবং তা পুর্ননির্মানের কোন উদ্যোগ নেওয়া  হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ক্যামেরার সামনে কোন কথা বলতে রাজি হননি। 
এদিকে পাবনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, বাসভবনটি পরিত্যাক্ত রয়েছে, তবে তা দ্রæততম সময়ে সংস্কার করে বসবাসের উপযোগি করে তুলতে গণপূর্তকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তিনি তা জানাতে পারেননি।
সাধরণ মানুষ মনে করেন, পাবনা গণপুর্ত বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্পে হরিলুট করলেও এবং বড় বড় প্রজেক্টের প্রতি নজর থাকলেও জেলা ও দায়রা জজ সাহেবের বাড়ি পুর্ননির্মানের কোন উদ্যোগ গ্রহন করেননি। অথচ রুপপুর বালিশ কান্ডের মত বড় বড় প্রজেক্টের টাকা হরিলুট করে এক একজন কর্মকর্তা ফুলে ফেপে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। একজন বিচারক যদি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে তার থেকে ন্যায় বিচার আশা করা যায় না। পাবনাবাসীসহ পাবনা বার সমিতির সদস্যদের দাবি, দ্রæত জেলা ও দায়রা জজ এর বাসভবন পুননির্মান করে বসবাসের উপযোগি করে পাবনাবাসীকে ন্যায় বিচার পেতে সহয়তার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।